থমাস নামের একজন লাইটহাউজ কীপারের সাথে সহযোগী হিসেবে কাজ করতে আসে উইনস্লো নামের একজন তরুণ। সীমাহীন সমুদ্রের মাঝে এক মৃতদেহের মতো শূন্য এবং পাথুরে দ্বীপের বুকে চলতে থাকে দুজনের দিনকাল। চুপচাপ মানুষ উইনস্লো প্রচণ্ড পরিশ্রম করে। কিন্তু সবচেয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাওয়া থমাস তার কাজে সন্তুষ্ট নয়। এদিকে উইনস্লো নিজের কক্ষে একটা পুতুল মৎসকন্যা খুঁজে পায়। নিজের একাকীত্ব সেটি দিয়ে ঘোচাতে গিয়ে সে অদ্ভুত আর রহস্যজনক কিছু জিনিষ দেখা শুরু করে। ওদিকে লাইটহাউজে কিছু একটা আছে যেটা থমাস কিছুতেই উইনস্লোকে দেখতে দিতে রাজী নয়। বাচাল লোকটার সাথে কেরোসিনের সাথে মধু মিশিয়ে পান করে উইনস্লো। তাকে একটা কিংবা অনেকগুলো সিগাল উত্যক্ত করছে। থমাসের আছে পাদের উৎকট শব্দ। ঝড় ধেয়ে আসে দ্বীপের গায়ে। উইনস্লো আর থমাস, দুজনের উন্মাদনা মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে থাকে। সব নষ্টের গোঁড়া ঐ লাইটহাউজ। Download
গ্রীক পুরাণের এক অলীক অ্যাডাপ্টেশন এই দ্য লাইটহাউজ। এক নির্জন নরকে দুজন মানুষের ক্রমাগত বিকারগ্রস্ত হয়ে ওঠার গল্পের ভেতর বেশ যত্নের সাথে একটি বহুমাত্রিক চিত্রের সৃষ্টি করেছেন পরিচালক রবার্ট এগার্স। ভদ্রলোকের প্রথম সিনেমা দ্য উইচ নিয়ে অনেক নামডাক হয়েছিলো। অনেকেই বলেছিলো তার মাঝে ইংমার বার্গম্যানের ছায়া রয়েছে। সেই কথাটির যেন আবার প্রমাণিত হলো দ্য লাইটহাউজ সিনেমাটিতে। উনিশ শতকের শেষের দিকের সময়কাল নিয়ে গড়ে সিনেমাটি সাদাকালো এবং ১.১৯:১ অ্যাস্পেক্ট রেশিও দিয়ে গড়া। এই অনন্য মেথডগুলো সিনেমাটির সময়কালের এক সত্যিকারের চেহারা দিয়েছে। একইসাথে মাত্র দুজন চরিত্র নিয়ে সিনেমাটির প্রায় পুরো সময় পার করায় একটা বদ্ধ অনুভূতি আসে সিনেমাটি দেখার সময় যেটা গল্পের খাতিরে বেশ কাজে দেয়। তবে সিনেমার নির্মাণে সবকিছু ছাড়িয়ে গিয়েছে এর অসাধারণ গল্পটি। গ্রীক পুরাণের গল্পকে এভাবে খুব সিম্পল টেকে আনতে পারার মুনশিয়ানা দেখা আমার জন্য বেশ উপভোগ্য। সাথে চরিত্রদের ধীরেধীরে গড়ে তোলা (পড়ুন ভেঙ্গে ফেলা) এবং তাদের অল্প আড়ম্বরে প্রতিষ্ঠা করার কাজটাও গল্পে বেশ ভালোভাবে সাধন হয়েছে। আগেই বলেছিলাম, অনেকের এবং নিজের মতেই রব এগার্সের মাঝে ইংমার বার্গম্যানের ছায়া রয়েছে। তার নিজের মাত্র দ্বিতীয় সিনেমার দ্য লাইটহাউজ, কিন্তু দেখে সেটা বোঝার কোন উপায় নেই।
এরপরই বলতে হয় সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের কথা। মার্ক কোর্ভেনের অনিন্দ্য সুরে আপনি সিনেমার প্রতিটি মোড়কে অনুভব করবেন একদম গভীর থেকে। এখানে এসে আরেকবার সিনেমার গল্প নিয়ে বলতে হয়। দ্য লাইটহাউজ সিনেমার গল্পটা কিছুটা অতিপ্রাকৃত, কিছুটা হাসকর, কিছুটা বদ্ধ উন্মাদনা, আর বাকিটা নিখাদ রহস্য। বিশেষ করে সিনেমার ক্লাইম্যাক্সে একটা লাভক্রাফটিয়ান ভাইব আছে, যেটা পুরো সিনেমায় জায়গায় জায়গায় উঠে এসেছে। এতোকিছু নতুন করে বলছি, কারণ এই ব্যাপারগুলো আরও তীর্যকভাবে ফুটে উঠেছে সিনেমার সেই দারুণ সাউন্ডট্র্যাকে
এবার আসি অভিনয়ে। সিনেমার পুরো স্ক্রিণটাইমজুড়ে
তবে রবার্ট প্যাটিনসনের পাশাপাশি কাজ করতে গিয়ে থমাস চরিত্রে থাকা উইলেম ড্যাফো খুব বেশী আলো যে পাননি সেটা তো নয়ই; বরং পাল্লা দিয়ে তিনিও আলো ছড়িয়েছেন সমানভাবে। সিনেমার একটা সীনে তো আলো ছড়ানোর কথাটা বেশ বাস্তবিক রূপে উঠে আসে। বিগ বাজেট কমার্শিয়াল সিনেমার পাশাপাশি ড্যাফোর এধরণের নিরীক্ষাধর্মী কাজ আগেও কয়েকটা দেখা হয়েছে। অ্যান্টিক্রাইস্
সাধারণত প্রায় প্রতিটি সিনেমায় একটা প্রেজেন্টেশন থাকে, একটা অফার থাকে। এই সিনেমায় তেমন অবভিয়াস কিছুই নেই। এই সিনেমা দর্শককে তেমন কিছুই রিভিল করবে না। দর্শকের নিজ থেকে বের করে নিতে হবে এই সিনেমার অফারকে। তাই সবার কাছে এই সিনেমা ভালো লাগার ব্যাপারে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। তবে আপনি ড্রামার ভক্ত হলে, ক্যারেক্টার বিল্ডাপের ভক্ত হলে, বহুমাত্রিক গল্প দেখতে চাইলে দ্য লাইটহাউজ বর্তমানের সর্বসেরা সিনেমা। সিনেমাটিকে আমি দিচ্ছি দশে পাক্কা দশ।